সকাল থেকে রাত
অব্দি একটানা বৃষ্টি হচ্ছে । সেই
সাথে মাঝে মাঝে বজ্রপাত । বিদ্যুৎ
নেই তাই মোম
জ্বালিয়ে শেলী উপন্যাস লিখছে ।
খুব শীঘ্রই তার এ উপন্যাসটা প্রকাশিত
হবে । ঔপন্যাসিক
হিসেবে শেলী রোজালীন বেশ নাম
করা । নির্জনতা শেলীর ভাল লাগে ।
তাই
হেনরিভিলে একটা বাড়ি কিনেছে
কয়েক মাস আগে । বাড়িটা অর্ধ
পুরোনো । বাড়ির মালিক ছিলেন
হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেন
কারমাইকেল । বাড়িটার
একটা ভুতুড়ে গুজব রয়েছে বলে কেউ
কিনতে চায়নি । এ বাড়িতে রাতের
বেলায় নাকি অর্গ্যানের সুর
ভেসে আসে মাঝে মাঝে ।
অনেকদিন বাড়িটা খালি পড়ে ছিল ।
পত্রিকায় বাড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ
করে শেলী একটা বিজ্ঞাপন
দিয়েছিল । তখনই হেনরিভিলে এই
বাড়িটার খোঁজ পেয়ে অতি অল্প
দামে শেলী বাড়িটি কিনে নেয় ।
তার মনের মত জায়গায়
বাড়িটা পেয়ে শেলী এ জন্য
আনন্দিত , উৎফুল্ল । এ বাড়িতে বেশ
কিছু পুরোনা আসবাবপত্রের
সাথে একটা পুরোনো অর্গ্যান ছিল ।
জিনিসগুলো একটা আলাদা ঘরে
রেখে শেলী নিজের জিনিসপত্র
দিয়ে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে ।
অবিবাহিত শেলীর রান্নাবান্নার
কাজ করে হাউজকিপার জুন মারিয়া ।
বেশ হাসি খুশি মহিলা ।
শেলী তাকে খুব পছন্দ করে ।
বৃষ্টির কারণে আজ আসতে পারেনি ।
তাই শেলীকে আজ খাবার
কিনে খেতে হয়েছে । তার
উপন্যাসটা প্রায় শেষের পথে ।
কয়েকদিনের মধ্যেই
প্রকাশককে দিয়ে দেবে ।
শেলী এক মনে লিখে চলেছে ।
ওদিকে টেবিলে রাখা মোমটা গলে
গলে প্রায় শেষ । কিন্তু
সেদিকে শেলীর খেয়াল নেই । বসার
ঘরে ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে । দপ
করে মোমটা নিভে গেলে শেলী
চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে আর
একটা মোম জ্বালিয়ে আনল । হঠাৎই
সে খেয়াল করল তার প্রচন্ড
ক্ষুধা পেয়েছে । মোম
হাতে নিয়ে রান্না ঘরের ফ্রিজ
খুলে স্যান্ডউইচের প্যাকেট আর
মিল্কশেক বের করল । টেলিফোনের
শব্দ পেয়ে খাবারগুলো রান্না ঘরের
টেবিলে রেখে নিজের
ঘরে ফিরে এলো । হ্যালো বলতেই
ওপাশ থেকে জুনের কণ্ঠ ভেসে এলো ।
জুন বলল, ‘মিস শেলী আপনার কোন
অসুবিধা হয়নিতো ?
আসলে আমি বৃষ্টির
কারণে আসতে পারিনি । লাইন
খারাপ থাকায় ফোনও
করতে পারিনি ।` শেলী হেসে বলল ,
‘না না আমার কোন অসুবিধা হয়নি ।
তুমি কোন চিন্তা কর না । কাল
বৃষ্টি কমলে চলে এসো ।` ‘আচ্ছা ঠিক
আছে রাখি ।` শেলী ফোন
রেখে রান্না ঘরে এসে দেখল
খাবারগুলো নেই । হঠাৎই পাশের ঘর
থেকে দুপদাপ শব্দ ভেসে এল শেলীর
কানে । শেলী রান্না ঘর
থেকে ছুটে বের হল । শব্দ শেষ
হতে না হতেই
পুরোনো অর্গ্যানটা বেজে উঠল
মৃদুভাবে । ভীষণ ভয় পেল সে ।
পুরোনো অর্গ্যান
কে বাজাতে পারে ভাবতে ভাবতে
রুমের দিকে এগিয়ে গেল ।
আলতো করে দরজাটা খুলে উঁকি দিয়ে
কাউকে দেখতে পেল না সে ।
পুরোনা অর্গ্যানটা পড়ে রয়েছে অনড়
হয়ে । দীর্ঘ নিশ্বাস
ছেড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল । ভাবল
সবই তার মনের কল্পনা । ফিরে আসার
জন্য পা বাড়াতে যাবে অমনি আবার
অর্গ্যানটা বাজতে লাগল আগের
চেয়ে কিছুটা জোরে । শেলী আবার
দরজা খুলে উঁকি দিয়েই স্থির
হয়ে গেল । ভয়ের ঠান্ডা স্রোত
বয়ে গেল তার শরীরে । দেখল বেশ
মনোযোগ দিয়ে অর্গ্যান
বাজাচ্ছে কালো আলখেল্লা পড়া
কেউ একজন । শেলী কম্পিত
কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আপনি ?
এখানে কেন ?` শেলীর কথায় আগন্তুক
অর্গ্যান বাজানো বন্ধ
করে দিয়ে ধীরে ধীরে শেলীর
দিকে আসতে লাগল । শেলী স্থির
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আগন্তুকের
চেহারা দেখেই তার
গলা চিরে বেরোলো চিৎকার । হাত
থেকে মোমটা পড়ে গিয়ে নিভে
গেল । প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হল
কাছাকাছি কোথাও । সেই
সাথে বিদ্যুৎ চমকলো । সেই আলোয়
দেখল তার
সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোমশ শরীরের
এক ভয়ঙ্কর জীব । মানুষের মত
দুটি করে হাত পা থাকলেও
মুখটা দেখতে একেবারে নেকড়ের মত
। চোখ দুটো টকটকে লাল। দুটি বড় বড়
দাঁত বেরিয়ে আছে ঠাঁটের বাইরে ।
অজ্ঞান হয়ে গেল শেলী । অনেক
পরে জ্ঞান
ফিরে পেয়ে শেলী প্রাণপণে দৌড়
দিল নিজের ঘরের দিকে । বসার ঘর
দিয়ে যাওয়ার সময় সোফার
সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সে ।
কোন রকমে উঠে আবার দৌড়
দিয়ে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল ।
কাঁপা হাতে টর্চ
জ্বেলে টেলিফোনের
দিকে এগিয়ে গেল শেলী কিন্তু
টেলিফোনের রিসিভার তুলতেই তার
মুখ শুকিয়ে গেল । টেলিফোন ডেড ।
কিছুক্ষণ আগেই সে জুনের
সাথে কথা বলেছে । বাইরে বৃষ্টির
বদলে এখন ঝড় শুরু হয়েছে । ঝড়ের
কারণে কোথাও হয়ত তার
ছিড়ে গেছে ।
নেকড়েরূপী জীবটা দরজায় আঘাত
করছে । শেলী দৌড়ে গিয়ে ড্রয়ার
খুলে তার লাইসেন্স
করা রিভলভারটা হাতে তুলে নিল ।
অদ্ভুত
প্রাণীটা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার
সাথে সাথে শেলী গুলি চালাল ।
প্রাণীটা লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে ।
শেলী প্রাণপণে ঘর
থেকে বেরিয়ে বাইরের দরজার
কাছে চলে গেল । কিন্তু
দরজাটা খুলতে পারল না ।
ওদিকে অদ্ভুত
প্রাণী উঠে দাঁড়িয়ে শেলীকে
আবার ধরার জন্য ছুটে এলো ।
শেলী চিৎকার করলেও তার
কান্না বৃষ্টির
শব্দে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ।
প্রাণীটি বিকট শব্দ করতে করতে তার
দিকে ধেয়ে আসছে দেখে ক্লান্ত
বিধ্বস্ত
শেলী দৌড়ে জানালা খুলতে
চেষ্টা করল । কিন্তু খুলতে পারল না ।
পাশে রাখা একটা চেয়ার
.নিয়ে জানালার কাঁচে আঘাত করল ।
কাঁচ ভাঙার পর কোন
রকমে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে ।
জ্ঞানশূণ্য হয়ে এই নির্জন জায়গায়
শেলী ছুটতে লাগল প্রাণপণে । কাদায়
হোচট খেয়ে পড়ে গেল বার কয়েক ।
প্রাণীটাও ছুটে চলেছে তার দিকে ।
শেলীও প্রচন্ড বেগে দৌড়াতে লাগল
। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল রাস্তার
পাশের ছোট্ট একটা খাদে । কোন
রকমে উঠে দেখল প্রাণীটা নেই ।
বৃষ্টির মধ্যে যতদূর চোখ যায়
তাকিয়ে দেখল প্রাণীর কোন চিহ্নই
নেই । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধপ
করে বসে পড়ল রাস্তার পাশে ।
শহরটাতে বাড়িঘরের ঘনত্ব কম ।
দূরে একটা খামার বাড়ি চোখে পড়ল
তার । ক্ষণিকের জন্য
সে বাড়িটা দেখলো বজ্রপাতের
আলোয় । শেলী বাড়িটার
দিকে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ
রাস্তায় দেখতে পেল হেড লাইট
জ্বেলে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে একটা
গাড়ি । রাস্তার
ধারে দাঁড়িয়ে শেলী বাঁচার
আনন্দে গাড়িটা কাছে আসতেই
সে চিৎকার করে থামতে বলল ।
সাহায্য প্রার্থনা শুনে গাড়ির
ড্রাইভারের সহানুভুতি হল ।
তাড়াতাড়ি শেলী বলল,
‘আমাকে বাঁচান একটা ভুত
আমাকে তাড়া করেছে । যে কোন সময়
সে চলে আসতে পারে ।` ড্রাইভার
কোন কথা বলল না । শেলী তার
চেহারা দেখতে পেল না। কারণ
লম্বা একটা হ্যাটের
কোণা দিয়ে সে মুখ
ঢেকে রেখেছে । তুমুল বৃষ্টি শুরু
হতে লাগল । সেই সাথে ঘন ঘন
হতে লাগল বজ্রপাত । শেলী আবার
করজোরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
`প্লিজ আমাকে বাঁচান ।`
লোকটা হ্যাট খুলে ফেলল ।
শেলী অন্ধকারে লোকটার মুখ
দেখতে পেল না । লোকটা বলল, `এত
তাড়া কিসের ?` শেলী আবার
কেঁদে বলল, `আমাকে একটা ভুত
তাড়া করেছে ।`
লোকটা খনখনে হাসি দিয়ে বলল,
`তাই নাকি !’ শেলী চমকে উঠল ।
লোকটার মুখের দিকে ভাল
করে তাকিয়ে দেখল গাড়ির
ড্রাইভার আর কেউ নয় স্বয়ং সেই অদ্ভুত
প্রাণী । কিছুক্ষণ বিমূঢ়
হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শেলী উল্টো
দিকে দৌড়াতে লাগল । ভুতটাও
গাড়ি নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করল
। এক সময় গাড়ির ধাক্কায়
শেলী উল্টে পড়ে গেল রাস্তার উপর ।
ভুতটা বাইরে বেরিয়ে শেলীর
দূরবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে
পড়ল । শেলী ভয়ার্ত গলায় চিৎকার
করে বলল, `তুমি কেন
আমাকে মারতে এসেছ ?` বিকট
কণ্ঠে ভুতটা বলল, `আমি এই
বাড়িতে কাউকে থাকতে দেব না ।`
কথা শেষ হওয়ার
সাথে সাথে গাড়িতে উঠে ভুতটা
শেলীর গায়ের উপর
দিয়ে চালিয়ে দিল । তারপর
হাসতে হাসতে অদৃশ্য হয়ে গেল
বাতাসের মধ্যে । পড়ে রইল
শেলী রোজালীনের রক্তাক্ত বিকৃত
লাশ ।
অব্দি একটানা বৃষ্টি হচ্ছে । সেই
সাথে মাঝে মাঝে বজ্রপাত । বিদ্যুৎ
নেই তাই মোম
জ্বালিয়ে শেলী উপন্যাস লিখছে ।
খুব শীঘ্রই তার এ উপন্যাসটা প্রকাশিত
হবে । ঔপন্যাসিক
হিসেবে শেলী রোজালীন বেশ নাম
করা । নির্জনতা শেলীর ভাল লাগে ।
তাই
হেনরিভিলে একটা বাড়ি কিনেছে
কয়েক মাস আগে । বাড়িটা অর্ধ
পুরোনো । বাড়ির মালিক ছিলেন
হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক জেন
কারমাইকেল । বাড়িটার
একটা ভুতুড়ে গুজব রয়েছে বলে কেউ
কিনতে চায়নি । এ বাড়িতে রাতের
বেলায় নাকি অর্গ্যানের সুর
ভেসে আসে মাঝে মাঝে ।
অনেকদিন বাড়িটা খালি পড়ে ছিল ।
পত্রিকায় বাড়ি কেনার আগ্রহ প্রকাশ
করে শেলী একটা বিজ্ঞাপন
দিয়েছিল । তখনই হেনরিভিলে এই
বাড়িটার খোঁজ পেয়ে অতি অল্প
দামে শেলী বাড়িটি কিনে নেয় ।
তার মনের মত জায়গায়
বাড়িটা পেয়ে শেলী এ জন্য
আনন্দিত , উৎফুল্ল । এ বাড়িতে বেশ
কিছু পুরোনা আসবাবপত্রের
সাথে একটা পুরোনো অর্গ্যান ছিল ।
জিনিসগুলো একটা আলাদা ঘরে
রেখে শেলী নিজের জিনিসপত্র
দিয়ে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে ।
অবিবাহিত শেলীর রান্নাবান্নার
কাজ করে হাউজকিপার জুন মারিয়া ।
বেশ হাসি খুশি মহিলা ।
শেলী তাকে খুব পছন্দ করে ।
বৃষ্টির কারণে আজ আসতে পারেনি ।
তাই শেলীকে আজ খাবার
কিনে খেতে হয়েছে । তার
উপন্যাসটা প্রায় শেষের পথে ।
কয়েকদিনের মধ্যেই
প্রকাশককে দিয়ে দেবে ।
শেলী এক মনে লিখে চলেছে ।
ওদিকে টেবিলে রাখা মোমটা গলে
গলে প্রায় শেষ । কিন্তু
সেদিকে শেলীর খেয়াল নেই । বসার
ঘরে ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে । দপ
করে মোমটা নিভে গেলে শেলী
চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে আর
একটা মোম জ্বালিয়ে আনল । হঠাৎই
সে খেয়াল করল তার প্রচন্ড
ক্ষুধা পেয়েছে । মোম
হাতে নিয়ে রান্না ঘরের ফ্রিজ
খুলে স্যান্ডউইচের প্যাকেট আর
মিল্কশেক বের করল । টেলিফোনের
শব্দ পেয়ে খাবারগুলো রান্না ঘরের
টেবিলে রেখে নিজের
ঘরে ফিরে এলো । হ্যালো বলতেই
ওপাশ থেকে জুনের কণ্ঠ ভেসে এলো ।
জুন বলল, ‘মিস শেলী আপনার কোন
অসুবিধা হয়নিতো ?
আসলে আমি বৃষ্টির
কারণে আসতে পারিনি । লাইন
খারাপ থাকায় ফোনও
করতে পারিনি ।` শেলী হেসে বলল ,
‘না না আমার কোন অসুবিধা হয়নি ।
তুমি কোন চিন্তা কর না । কাল
বৃষ্টি কমলে চলে এসো ।` ‘আচ্ছা ঠিক
আছে রাখি ।` শেলী ফোন
রেখে রান্না ঘরে এসে দেখল
খাবারগুলো নেই । হঠাৎই পাশের ঘর
থেকে দুপদাপ শব্দ ভেসে এল শেলীর
কানে । শেলী রান্না ঘর
থেকে ছুটে বের হল । শব্দ শেষ
হতে না হতেই
পুরোনো অর্গ্যানটা বেজে উঠল
মৃদুভাবে । ভীষণ ভয় পেল সে ।
পুরোনো অর্গ্যান
কে বাজাতে পারে ভাবতে ভাবতে
রুমের দিকে এগিয়ে গেল ।
আলতো করে দরজাটা খুলে উঁকি দিয়ে
কাউকে দেখতে পেল না সে ।
পুরোনা অর্গ্যানটা পড়ে রয়েছে অনড়
হয়ে । দীর্ঘ নিশ্বাস
ছেড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল । ভাবল
সবই তার মনের কল্পনা । ফিরে আসার
জন্য পা বাড়াতে যাবে অমনি আবার
অর্গ্যানটা বাজতে লাগল আগের
চেয়ে কিছুটা জোরে । শেলী আবার
দরজা খুলে উঁকি দিয়েই স্থির
হয়ে গেল । ভয়ের ঠান্ডা স্রোত
বয়ে গেল তার শরীরে । দেখল বেশ
মনোযোগ দিয়ে অর্গ্যান
বাজাচ্ছে কালো আলখেল্লা পড়া
কেউ একজন । শেলী কম্পিত
কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আপনি ?
এখানে কেন ?` শেলীর কথায় আগন্তুক
অর্গ্যান বাজানো বন্ধ
করে দিয়ে ধীরে ধীরে শেলীর
দিকে আসতে লাগল । শেলী স্থির
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আগন্তুকের
চেহারা দেখেই তার
গলা চিরে বেরোলো চিৎকার । হাত
থেকে মোমটা পড়ে গিয়ে নিভে
গেল । প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হল
কাছাকাছি কোথাও । সেই
সাথে বিদ্যুৎ চমকলো । সেই আলোয়
দেখল তার
সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোমশ শরীরের
এক ভয়ঙ্কর জীব । মানুষের মত
দুটি করে হাত পা থাকলেও
মুখটা দেখতে একেবারে নেকড়ের মত
। চোখ দুটো টকটকে লাল। দুটি বড় বড়
দাঁত বেরিয়ে আছে ঠাঁটের বাইরে ।
অজ্ঞান হয়ে গেল শেলী । অনেক
পরে জ্ঞান
ফিরে পেয়ে শেলী প্রাণপণে দৌড়
দিল নিজের ঘরের দিকে । বসার ঘর
দিয়ে যাওয়ার সময় সোফার
সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল সে ।
কোন রকমে উঠে আবার দৌড়
দিয়ে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল ।
কাঁপা হাতে টর্চ
জ্বেলে টেলিফোনের
দিকে এগিয়ে গেল শেলী কিন্তু
টেলিফোনের রিসিভার তুলতেই তার
মুখ শুকিয়ে গেল । টেলিফোন ডেড ।
কিছুক্ষণ আগেই সে জুনের
সাথে কথা বলেছে । বাইরে বৃষ্টির
বদলে এখন ঝড় শুরু হয়েছে । ঝড়ের
কারণে কোথাও হয়ত তার
ছিড়ে গেছে ।
নেকড়েরূপী জীবটা দরজায় আঘাত
করছে । শেলী দৌড়ে গিয়ে ড্রয়ার
খুলে তার লাইসেন্স
করা রিভলভারটা হাতে তুলে নিল ।
অদ্ভুত
প্রাণীটা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার
সাথে সাথে শেলী গুলি চালাল ।
প্রাণীটা লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে ।
শেলী প্রাণপণে ঘর
থেকে বেরিয়ে বাইরের দরজার
কাছে চলে গেল । কিন্তু
দরজাটা খুলতে পারল না ।
ওদিকে অদ্ভুত
প্রাণী উঠে দাঁড়িয়ে শেলীকে
আবার ধরার জন্য ছুটে এলো ।
শেলী চিৎকার করলেও তার
কান্না বৃষ্টির
শব্দে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ।
প্রাণীটি বিকট শব্দ করতে করতে তার
দিকে ধেয়ে আসছে দেখে ক্লান্ত
বিধ্বস্ত
শেলী দৌড়ে জানালা খুলতে
চেষ্টা করল । কিন্তু খুলতে পারল না ।
পাশে রাখা একটা চেয়ার
.নিয়ে জানালার কাঁচে আঘাত করল ।
কাঁচ ভাঙার পর কোন
রকমে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে ।
জ্ঞানশূণ্য হয়ে এই নির্জন জায়গায়
শেলী ছুটতে লাগল প্রাণপণে । কাদায়
হোচট খেয়ে পড়ে গেল বার কয়েক ।
প্রাণীটাও ছুটে চলেছে তার দিকে ।
শেলীও প্রচন্ড বেগে দৌড়াতে লাগল
। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেল রাস্তার
পাশের ছোট্ট একটা খাদে । কোন
রকমে উঠে দেখল প্রাণীটা নেই ।
বৃষ্টির মধ্যে যতদূর চোখ যায়
তাকিয়ে দেখল প্রাণীর কোন চিহ্নই
নেই । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধপ
করে বসে পড়ল রাস্তার পাশে ।
শহরটাতে বাড়িঘরের ঘনত্ব কম ।
দূরে একটা খামার বাড়ি চোখে পড়ল
তার । ক্ষণিকের জন্য
সে বাড়িটা দেখলো বজ্রপাতের
আলোয় । শেলী বাড়িটার
দিকে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ
রাস্তায় দেখতে পেল হেড লাইট
জ্বেলে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে একটা
গাড়ি । রাস্তার
ধারে দাঁড়িয়ে শেলী বাঁচার
আনন্দে গাড়িটা কাছে আসতেই
সে চিৎকার করে থামতে বলল ।
সাহায্য প্রার্থনা শুনে গাড়ির
ড্রাইভারের সহানুভুতি হল ।
তাড়াতাড়ি শেলী বলল,
‘আমাকে বাঁচান একটা ভুত
আমাকে তাড়া করেছে । যে কোন সময়
সে চলে আসতে পারে ।` ড্রাইভার
কোন কথা বলল না । শেলী তার
চেহারা দেখতে পেল না। কারণ
লম্বা একটা হ্যাটের
কোণা দিয়ে সে মুখ
ঢেকে রেখেছে । তুমুল বৃষ্টি শুরু
হতে লাগল । সেই সাথে ঘন ঘন
হতে লাগল বজ্রপাত । শেলী আবার
করজোরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
`প্লিজ আমাকে বাঁচান ।`
লোকটা হ্যাট খুলে ফেলল ।
শেলী অন্ধকারে লোকটার মুখ
দেখতে পেল না । লোকটা বলল, `এত
তাড়া কিসের ?` শেলী আবার
কেঁদে বলল, `আমাকে একটা ভুত
তাড়া করেছে ।`
লোকটা খনখনে হাসি দিয়ে বলল,
`তাই নাকি !’ শেলী চমকে উঠল ।
লোকটার মুখের দিকে ভাল
করে তাকিয়ে দেখল গাড়ির
ড্রাইভার আর কেউ নয় স্বয়ং সেই অদ্ভুত
প্রাণী । কিছুক্ষণ বিমূঢ়
হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শেলী উল্টো
দিকে দৌড়াতে লাগল । ভুতটাও
গাড়ি নিয়ে তার পেছনে ধাওয়া করল
। এক সময় গাড়ির ধাক্কায়
শেলী উল্টে পড়ে গেল রাস্তার উপর ।
ভুতটা বাইরে বেরিয়ে শেলীর
দূরবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে
পড়ল । শেলী ভয়ার্ত গলায় চিৎকার
করে বলল, `তুমি কেন
আমাকে মারতে এসেছ ?` বিকট
কণ্ঠে ভুতটা বলল, `আমি এই
বাড়িতে কাউকে থাকতে দেব না ।`
কথা শেষ হওয়ার
সাথে সাথে গাড়িতে উঠে ভুতটা
শেলীর গায়ের উপর
দিয়ে চালিয়ে দিল । তারপর
হাসতে হাসতে অদৃশ্য হয়ে গেল
বাতাসের মধ্যে । পড়ে রইল
শেলী রোজালীনের রক্তাক্ত বিকৃত
লাশ ।
No comments:
Post a Comment